ছেড়া পৃষ্ঠা

যেদিন তুমি জীবনে অনেকটা ম্যাচিউর হয়ে যাবে, সেদিন আর ফেসবুকে এত পরিমাণে সব উক্তি আর ম্যাচিউর হওয়ার নানা ডে দিতে হবে না। হয়তো তখন তোমার ডে ফাঁকা পরে থাকবে বা বিভিন্ন রকম জিনিস আপলোড দিবে। এমনটা ভেবো না যে একদমই ম্যাচিউর কিছু করবে না, করবে তবে মাঝে মঝে। রোজ করলে যে আপত্তি আছে তা ভেবে আবার ভুল বুঝবে না প্লিজ। জীবনে একটা সময় আসে যখন আমরা বাহির থেকে অনেক অনেক বাচ্চামি শুরু করি। ঐ যে ষোলো-সতেরো বছর বয়সে তুমি বন্ধুর ফোনে পর্ণ দেখা শিখেছিলে, তখন থেকে ওটা তোমার কাছে একটা বিনোদন হয়ে গেছিলো। সে সব ছেড়ে তুমি ইউটিউব ঘেঁটে আবার টম এন্ড জেরি দেখা শুরু করবে। গম্ভীর হয়ে থাকা; গম্ভীর সব কথা বলা অনেকটা কমে যাবে। তুমি কিছুটা হৈরৈও করতে পারো।

তুমি বুঝে যাবে বয়সটা তেমন বড় কিছু না। পনেরো বছর বয়সের ছেলেও গুগলে প্রোগ্রামার হয়ে জব করে আর পঁচিশ বছর বয়সের সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার প্রাইভেট আইটি ফার্মের জব নিয়ে দৌড়ে বেড়ায়। তোমার থেকে দশ বছরের বড় কেউ তোমার কাছের বন্ধু হতে পারে। তোমার থেকে দশ বছরের ছোট কারো সাথে তোমার বোঝাপড়াতে সংসার হতে পারে। তুমি ছেলে না মেয়ে, মেয়েরা ছেলেদের থেকে মেন্টালি তিন-চার বছর এগিয়ে থাকে এসব আর তোমার মাথায় খাটবে না। সেদিন যে প্রশ্নটা বিবেচনায় বারবার আসবে তা হলো, ওর সাথে তোমার যায় কিনা, বোঝাপড়াটা হয় কিনা। তোমার হাজবেন্ডই সবসময় তোমাকে বুঝবে এমনটা প্রয়োজন নেই৷ তুমি তাকে বুঝে, তোমরা নিজেদের তাল মিলাতে পারলেই চলবে। "আমার বউকে দেখে ঐশ্বরিয়া বচ্চনও ফিরে তাকাবে" বলা ছেলেটাও ক্লাসে সবাই "মুটকি" বলা মেয়েটাকে নিয়ে ঘর করে। আর সেই অপরুপা সুন্দরী মেয়েটা। ইয়ার্কি করে বন্ধুর হাত ধরে তোলা শখের দুইটা ছবিতে বিনাকরণে বদনাম হয়ে চাচাতো ভাইয়ের সাথে বিয়ে। ঘরের দরজা বন্ধ হলে তার গালে যে প্রেম খেলা হয় প্রতিদিন এমনটা নয়। বেশির ভাগ দিনই দরজা বন্ধের পর তার গালে-পিঠে থাপ্পড়ের ঝড় চলে। একদিন আসবে যখন তোমাকে এক কালারের শার্ট আর জিন্সে দারুণ মানাবে। আমাজন থেকে ব্রান্ডের ঘড়ি কেনা লাগবে না। রাস্তার ধার থেকে পঞ্চাশ টাকায় কেনা সাদা ডায়েল আর সিনথেটিকের বেল্টর ঘড়িটায় তোমাকে স্মার্ট লাগবে।

বিয়েতে বা নানা অনুষ্ঠানে তুমিও নিজের লজ্জার কিছুটা সাইডে রেখে আইটেম গানে হাল্কা নেচে ফেলবে। তোমাকে দেখে চোদ্দো-পনেরো বছর বয়সের ছেলে-মেয়ে গুলো কানেকানে বলে ফেলতে পারে, "সবার সামনে নাচছে! লজ্জা লাগছে না উনার" সেদিন তোমার আর খুব একটা লজ্জা লাগবে না। তুমি তখন জানো জীবনে গম্ভীর হয়ে থাকার, ডিপ্রেসড হওয়ার জন্য তোমার অনন্তকাল আছে। বাড়ির বাহিরে একটু হৈরৈ করার সুযোগ তুমি উপভোগ করতে চাইবে। অফিসের চেয়ারে বসা স্ট্রেস থেকে বাসায় ঢুকার সাথে সাথে এই-সেই কত যে ঝামেলা। মনে হবে সারা দুনিয়া যেন তোমাকে মেরে ফেলার চক্রান্ত করেছে। তুমি এসব ভাবছো। হঠাৎ তখন কেউ আব্বু বা আম্মু বলে ডেকে উঠে তোমার মুখে তাকিয়ে বলবে, "তোমার কি মন খারাপ।" ঠিক সেই মুহুর্তে বেডরুমের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় তোমার মিস্টার বা মিসেস কথাটা শুনে ঘরে ঢুকে বলবে," কি হয়েছে?" তুমি "আব্বু-আম্মু যাও তোমার ঘরে যাও" বলে বাচ্চাটাকে ঘর থেকে বেড় করে, তার বুকে মাথা এলিয়ে দিয়ে অথবা তার কোমড়ে হাত দিয়ে তাকে বুকের কাছে টেনে নিয়ে বলবে, "আচ্ছা বিয়ের আগে আমরা গার্ডেনে যেতাম না? কতদিন যাওয়া হয়না। চলো না এর মধ্যে একদিন যাই।" ঘরের জিরো লাইটটা জ্বলে উঠলে তোমরা নেশা করবে। সিগারেট, আফিম, কোকোনই শুধু নেশা নয়। আমি যত্রতত্র কবিতা আবৃত্তি করি। তুমি সম্ভবত সুযোগ পেলে বালিশে দু'ফোঁটা কান্না করো। এসবই নেশা। গ্রীষ্মে কুকুর ড্রেনের পানিতে শুয়ে থাকে। যন্ত্রণা হলে সুখের খোঁজ সবাই করে। দেখেছ এর মধ্যে তুমি কত সুন্দর অভিনয় করে ফেললে! কোথা থেকে কোথায় কথা বদলে দিলে। বাঁচার জন্য অভিনয় শিখতে হয়।

পুরনো একটা গানের কথা আছে, "জীবনের সব কথা বলা হয়ে গেলে। সে জীবনের আর মূল্য থাকে না।" আমি কি কি করতে করতে একদিন তার কোমড়ে হাত দিয়ে তাকে কাছে টেনে নিয়ে ছিলাম। সে ভেবেছিল আমি আমার ঠোঁট দিয়ে তার ঠোঁট চেপে ধরবো হয়তো। কিন্তু হঠাৎ আমি তার কাঁধে মুখ বুজে দিয়ে হাহাকার করে কাঁদতে লেগে ছিলাম, তাকে প্রায় আমার সবটা বলে ফেলেছিলাম। পরে কয়দিন ঠিক মত সে কথা বলছিল না। ক'দিন বাদে আমাকে বললো, "আমাদের না ঠিক হয়ে উঠছে না। এ সম্পর্কটা শেষ করে দেওয়াই ভালো।" মধ্যরাতে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েগুলোরও একটা দাম আছে। তবে তার চোখে সেদিন আমার আর কোনো দাম ছিল না। এমন সব দিন যে সবার জীবনেই আসে তা না, কারো কারো জীবনে এসে পৌঁছায়। আবার হতে পারে আমার সেরূপ দেখে সে ভয় পেয়ে গেছিল। এমনটাও না যে কেউ বিয়ষটা মেনে নিতে পারবেনা। অনেকে খুব সহজে মেনে নেয়। আবার কেউ কেউ তোমার ভিতরের এই লাভার স্রোত দেখার কল্পনাও করে না।

এমন বলছি না যে তোমাকে সবাই হাস্যোজ্জ্বলই দেখবে সর্বদা। তোমার সে বিষণ্ণ, ক্লান্ত চেহারার সাথেও মাঝে মাঝে মানুষের আলাপ হবে। দিনে দিনে পরুনো চেনা মানুষ ফেলে তুমি নতুন চেনাশোনা সাজাবে। খেয়াল না করার ভান করে পাশ কাঁটিয়ে হেঁটে যাবে কতকার। জীবন একটা খেলা। যতদিন যাবে তুমি খেলা শিখতে থাকবে। সবার আগে শিখতে হবে নিজের সাথে খেলা। প্রথম প্রথম আশা থাকবে নিজের মুখোশটা একদিন খুলে ফেলার অন্তত একজন কারো কাছে, নিজের নিজেকে প্রকাশ করার। তবে ধীরে ধীরে এক সময় "নিজের নিজে" কথা মনে পড়লে এক ফালি হাসি দিয়ে তা ভুলে যাবে। তোমার জানা কথা গুলো অনেকে তোমাকে বোঝাতে আসবে। তুমি তাদের আর বাঁধা দিবে না, বলবে না যে তুমি তা জানো। তারা ভাববে তুমি তাদের কথা শুনলে না, বুঝলে না, অবজ্ঞা করলে। আসলে তারা নিজেরাই জানে না তোমার অবস্থান। তুমি কিন্তু বেপরোয়াভাবে দিব্বি চলবে। তোমার হৈরৈ করা স্বভাব, বাচ্চামি সব থাকবে। এতে কোনো আপত্তি নেই। একটা কথা মাঝে মাঝে শোনা যায়, "হয়তো তুমি কিছুই বোঝনি। হয়তো তুমি সবই বুঝেছ।" মানুষ বাচ্চামি করে দুইটা সময়, যখন তারা বুঝতে পারে না আর যখন তারা ঠিকঠাক বুঝতে পারে। এসব সাজিয়ে নিয়ে জীবন চলতে থাকবে।



(আমার এই লিখাটা পড়ার পর তুমি দীর্ঘ একটা শ্বাস ছাড়বে। ভিতরে একটা কেমন কেমন লাগবে। তুমি হয়তো চট করে কিছু করতে লাগবে কিন্তু তা ফেলে রেখে দপ করে বসে পড়বে। আস্তে আস্তে তুমি কিছুটা নিস্তেজ হয়ে আসবে। নিস্তেজ থাকার পর তুমি কয়টা শ্বাস নিবে ছাড়বে। আবার কাজ শুরু করবে। তোমার হাল্কা হাল্কা ভালো লাগবে, অন্তত কেউ তো তোমার ভিতরের কথা গুলো বুঝে। হ্যাঁ, সে আপন না তবু অন্তত একজন বুঝে তো। সবসময় আপনেরাই বুঝবে তা কোথায় লেখা আছে। জীবনে সব তো আর মনের মত হয়না। মানিয়ে নিয়েই তো তুমি চলেছ, চলছ। আর এভাবেই জীবন চলবে।)





©মাহিন - আল বিরুণী



মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ