আন্তঃনগর মঙ্গযান
Painting © Urba Riazi |
হঠাৎ রেলে নতুন নিয়োগ প্রাপ্ত এক তরুণ অপারেশন অফিসার স্টেশন ভিজিটে এলেন। তিনি ট্রেনটিকে ভালো করে দেখে, খোঁজ খবর নিলেন। জানতে পেলেন এই ট্রেনে আগে এগারোটি বগি ছিল। পরে এর ইঞ্জিনের ধারণ ক্ষমতার অবক্ষয় হলে আস্তে আস্তে বগির সংখ্যা কমানো হয়। শেষ কিছুদিন এটি ছয়টা বগি নিয়ে চলাচল করেছে। আসলে ধারণ ক্ষমতা কমলে ট্রেনের নাড়ির সাথে জোড়া লাগানো বগি গুলোও আলাদা হতে থাকে। সে বগি গুলো অন্য সচল ইঞ্জিনে সংযুক্ত করা হয়। অপারেশন অফিসার বললেন, এই অচল জিনিস দিয়ে রেললাইন বন্ধ করে রেখেছেন কেন? এইটা দ্রুত সরিয়ে লাইন ক্লিয়ার করেন। উনাকে জানানো হল এই লাইনটা পরিত্যক্ত। উনি তারও জবাব দিলেন বললেন দেশে বর্তমানে যেভাবে রেলে দূর্ঘটনা ঘটছে, তার থেকে পরিত্রাণ পেতে কিছু লাইনও নতুন করে বসানো হবে। সে সময় উনি এই লাইন ঠিক করিয়ে দিবেন। উনি ট্রেনটা চালু করার ব্যবস্থা করতে বললেন আর ট্রেন ম্যানেজমেন্টে জানালেন উনি এইটা নিয়ে আসছেন। উনার সিদ্ধান্ত হল এই ট্রেনটা এইবার স্টিল কোম্পানির কাছে বিক্রি করে দিতে হবে। ওরা এটাকে গলিয়ে ধাতু গুলো দিয়ে অন্য কিছু বানাবে।
যথারিতি সব কাজ শেষ করে, অফিসার ট্রেনটিতে চড়ে রওনা হলেন। ট্রেন জানে না তাকে কোথায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। তবে এতদিন একই স্টেশনে বিনাযত্নে আর বিনাকারণে থেমে থাকা যে বড় ভুল হয়েছে তা সে জানে। এই থেমে থাকা যে তাকে শুধুই মূল্যহীন করেছে এটা স্পষ্ট বুঝে সে। এই অফিসার যে তাকে ভালো কোথাও নিয়ে যাবে না এই ধরণাও কেন জানি তার হয়েছে! তার মনের ভিতরে অফিসারের উদ্দেশ্যে কিছু ভাসছিল। কথা গুলো এমন যে,
হেই অ্যংরি ইয়াঙ ম্যান একটু শুনুন আমার কথা। একদিন আপনাকেও এভাবেই কিছু অ্যংরি ইয়াঙ ম্যান নিয়ে যাবেন শ্মশানের দিকে। তাই বলছি একটু ধীরে গেলেও পারেন। আমার কাছে কত শত মানুষ ছুটে এসেছে। আমি চলে না যাই, সেই ভয়ে কত কার ঘন্টার পর ঘন্টা স্টেশনে বসে থাকা। মানুষের কোনো প্রয়োজন স্টেশন মিটাতে পারে না, প্রয়োজন মিটাতে পারে ট্রেন। তাও সবাই স্টেশনেকে ঠিকানা করে, ট্রেনকে না। মানতে পারিনি তবে এটাও জানি, এক স্টেশনে বেশিক্ষণ থামতে হয় না। কারণ ট্রেনের সাথে কারো মায়া হয় না। ইঞ্জিনে জং ধরে যাবে তখন ট্রেন আর যেতে পারবে না। যতক্ষণ ট্রেন চলতে পারে ততক্ষণই ট্রেনের কিছু মূল্য থাকে।
আন্তঃনগর মঙ্গযান
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন