ধুয়ার চিঠি



বিকেলে পদ্মার পাড়ে নন্দিনীর সাথে দেখা, সাথে একটা ছেলে ছিল। ছেলেটাকে আমি চিনি তাও চিনি না মানে মুখটা চেনা। নন্দিনী আমাকে দেখে আমার দিকে তাকাতেই জিজ্ঞেস করলাম, "কেমন আছো?" সে উত্তর দিয়ে আমি কেমন আছি জিজ্ঞেস করল। ততক্ষণ পর্যন্ত আমি ভালো ছিলাম। আর নন্দিনীকে দেখার পর আরও বেশি ভালো ছিলাম। কিন্তু তারপর নন্দিনী আমাকে যা বলল তা, আমাকে আমার জীবনে এখন পর্যন্ত কার সব থেকে খারাপ থাকতে বাধ্য করে দিলো। নন্দিনী ওর সাথের ছেলেটাকে আমার সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়ে বলল, "ওর নাম অনিক। আমার বয়ফ্রেন্ড।"

বয়ফ্রেন্ড! এই শব্দটা শোনার সাথে সাথে আমার কানে যেন সেই স্টার প্লাসের নাটকের মত ধুমতানানা ধুমতানানা বেজে উঠল। আমি মলিন চোখে একটা কোনোমতে ঠোঁট বাকা হাসি দিয়ে খুব দ্রুত হেঁটতে লাগলাম। এখন অনেক রাত হয়েছে, আমার রুমমেট ঘুমাচ্ছে, আমার হাতে একটা সিগারেট জ্বলছে, আমি জানালায় বসে আছি। আমার এখন নন্দিনীকে কিছু কথা বলতে খুব ইচ্ছে করছে। নন্দিনী আমার কলেজের বান্ধবী। প্রথম ক্লাসের এক ফাঁকে ক্লাসে গুনগুন করে গান গাওয়া শুনতে পাচ্ছিলাম। গানের কন্ঠটা যে চমৎকার তা অস্বীকার করা পাপ। তবে এও সত্য যে মেয়ে মানুষের কন্ঠ অধিকাংশ ছেলের কাছে এই বয়সে চমৎকারই লাগে! গানের গুনগুন খেয়াল করে তাকিয়ে দেখি একটা উজ্জ্বল শ্যামনর্ণের মেয়ে গান গাইছে। তার ঠোঁটের বা'পাশের তিলটাতে আমার চোখ আঁটকে যায়। সে তিলের প্রতি তাকিয়ে থেকে আমি যেন কবি হওয়ার উপক্রম হয়েছিলাম সেদিন। তারপর কোনোভাবে তার নাম জানতে পারি, বন্ধুত্বও করি। তবে এবেলা তাকে কিছু কথা বলতে প্রচন্ডভাবে মস্তিষ্কে চাপ অনুভব করছি। ভাবছি একটা আগন্তক চিঠি লিখব নাকি।

নন্দিনী, আমাকে তুমি অনেকবার স্টেজে বক্তৃতা দিতে দেখেছ। আমাদের ক্লাবের প্রেসিডেন্ট হিসেবে আমাকে অনেকবার বিভিন্ন জায়গায় কথা বলতে বা ঝগড়া করতে দেখেছ। জানো তোমরা যে আমাকে এত কিছু বলতে দেখেছ; সে আমার কিছু কথা তোমাকেও বলার ছিল। এ পৃথিবীতে সব থেকে বেশি জিজ্ঞেস করা প্রশ্ন গুলোর একটা হল, "কেমন আছ?" তবে মজার ব্যাপার এই প্রশ্ন যারা করে অধিকাংশই শুধুমাত্র সৌজন্য রক্ষার্থে করে। বাস্তবে খুব কম সংখ্যক মানুষ জানতে চায় যে সামনের মানুষটা কেমন আছে। আমি তোমাকে এই প্রশ্নটা প্রায় প্রতিদিনই করি। আমি সত্যিই জানতে চাই তুমি কেমন আছে, তুমি কেমন থাকো। তোমার খবর জানার জন্য একটা অস্থিরতা কাজ করে আমার মনে। কিন্তু এই কেমন আছ বলার পর তুমি উত্তর দাও, তবে তারপর আমার আর কিছু বলার থাকে না! তুমি যদি পাল্টা প্রশ্ন করো আমি কেমন আছি তবে বলি আর না করলে আমাকে বিদায় নিতে হয়। মাঝেমাঝে আমি গায়ে পরে তোমাকে আমার কিছু কথা বলি। তোমার খুব একটা ইন্টারেস্টিং লাগে না বুঝতে পেরে আমি চুপ হয়ে যাই। আসলে তোমার সাথে কিভাবে কথা বলব, কি বলব বুঝিনি আমি। অনেককে বলতে শুনবা যে সে নাকি মেয়েদের সাথে কথা বলতে পারে না। আর আমার ক্ষেত্রে, আমি না কারো সাথেই কাজ ছাড়া তেমন কথা বলতে পারিনা। আমি তোমার সাথে কি নিয়ে কথা বলে তোমার কাছে নিজেকে আকর্ষনীয় করব বা তোমার সাথে কি নিয়ে কথা বললে তোমার ইন্টারেস্টিং লাগবে আমি জানি না। আমি শুধু আমার কাজ বুঝি। আর আমার কাছে যারা আসে বা যারা সাথে থাকে তারাও আমার কাছে মূলত কাজের জন্যই আসে। আমার জীবনটা এমন একটা খেলা যে আমার সত্যিকারের খেলার সময়ের বেশির ভাগ জীবন খেলাতে শেষ হয়েছে। জীবনটা এলোমেলো ভাবে চলেছে বেশির ভাগ সময়। প্রকৃতপক্ষে আমি তো মানুষ, বেলা শেষে আমার জীবন আছে জীবনের কিছু চাহিদা আছে। এদিক ওদিক করে অনেক কিছু পার করলেও, কিছু হঠাৎ সামনে এসে দাঁড়ায়। ক্লাব আর বন্ধুরা আমার জীবনের অনেকটা অংশ জুড়ে আছে। তবে জীবন তো ক্লাবের সাথে হয়না। জীবনে একজন সঙ্গী লাগে, জীবনটা ভাগাভাগি করতে হয়। এইটা আমার জীবনেও বাস্তব চাওয়া। আমি এই চাওয়ার ব্যাপারে সর্বদা খুব উদাসীন থেকেছি। তবে আজ কোথায় যেন প্রচন্ড অসহ্যকর কিছু অনুভব হচ্ছে।

আমার বন্ধু শাহী ওর গার্লফ্রেন্ডের পিছনে প্রেমের আগে চার মাস ঘুরে ছিল। সে ঘুরার সময় ও একদিন আড্ডায় বলেছিল, "এক তরফা ভালোবাসা খুব কষ্টকর। যাদের অন্তত একবার কিছু হয়েছে তারা তাও স্মৃতিটা নিয়ে বেঁচে থাকতে পারে।"এদিকে রিফাত তো সেই হাই স্কুলেই ছ্যাঁকা খেয়েছিল। তাই সে এইটার প্রতিবাদ করে বলে, "স্মৃতি নিয়ে বেঁচে থাকা বেশি কষ্টকর। থেকে থেকে যখন স্মৃতিগুলো মনে পরে তখন বুকের ভেতর এমন হাহাকার সৃষ্টি হয় যা যেন বুকের ভেতর সব কিছু লণ্ডভণ্ড করে দেয়। বুকের ভিতর থেকে কিছু যেন বুকটা মধ্যে থেকে ফেটে বেড়িয়ে যেতে চায়।"

আমার ক্ষেত্রে কোনটা হয়েছে বা অন্য কোনো কিছু হয়েছে আমি জানি না। আমি খুব চাপা স্বভাবের ছেলে, এইটা আমাকে আমার স্কুলের বেস্টফ্রেন্ড লামিশা বলত। স্কুলে আমার কয়েকটা বেস্ট ফ্রেন্ড ছিল তবে এখন তারা নিজেদের জীবনে ব্যস্ত হয়ে গেছে। আমার হাতে একদিন সিগারেট দেখে তুমি খুব রাগান্বিত চোখে তাকিয়ে ছিলে। জানো সিগারেট আমি প্রথম ধরিয়ে ছিলাম ক্লাস এইটে থাকতে। তখন আমি সপ্তাহে বা মাসে আধ-একবার ধুয়া নিতাম। এভাবেই এত বছর চলেছে। আজ কিভাবে জানি এইটা নয় নম্বর! না না ভেবো না এইটা তোমার জন্য তোমার জন্য না। শুধু ভালো লাগছে তাই।





১১ ডিসেম্বর, ২০১৯

মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ