কল্পনিতা ১৪ জানুয়ারি, ২০২০

১৪ জানুয়ারি, ২০২০
মানিক মিয়া এভিনিউ

কল্পনিতা,
কেমন আছো? আজও তোমাকে লিখছি। জানো লিখার ইচ্ছা ছিল না। কিন্তু হঠাৎ আমি ভালো থাকতে পারছি না।

সে যা ভাবছে তা ভুল। সব মানুষের সাথে নিজের একান্ত কথা বলতে হয়না। একদম না বলে থাকতে পারলে তো ভালো। তবে কিছু কিছু সময় চলে আসে যখন অন্তত কিছু কথা না বললে খুব সমস্যা হতে লাগে যেমন; দমবন্ধ লাগে, খুব বিষণ্ণ লাগে, ছটফটানি হয় ইত্যাদি। তখন কিছু কথা শেয়ার করা লাগে। কথা শেয়ার করা মানে বন্ধুর কাছে বলা তাই তো? জ্ঞানী লোকেরা বলেছেন, " যে তোমার সাথে পড়ে, চাকরি করে বা তোমার সাথে কোনো জায়গায় প্রতিযোগিতা করে সে কখনোই তোমার ভালো বন্ধু হবে না।"  তাহলে প্রশ্ন ভালো বন্ধু হবে কে? উত্তরটা সাধারণ তোমার সাথে প্রতিযোগিতা করেনা এমন কাউকে বন্ধু করতে হবে।

আমার একটা অভ্যাস ছিল সেই আইডিয়াটাও ব্যবহার করে দেখা যেতে পারে কিন্তু সব ক্ষেত্রে এইটার চর্চা করা যায় না। অভ্যাসটা এমন যে আমার একটা ফেক আইডি ছিল। কোনো মেয়ের নামে ভেবো না, ছেলের নামেই। সেই আইডি থেকে আমি ইন্ডিয়ান বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পেজে ঘুরতাম আর অনেক মেয়ের মানে বড় দিদিদের প্রোফাইল ভিজিট করতাম। তারা কিন্তু ইন্ডিয়ান। তো এসব প্রোফাইলের মধ্যে যে যে প্রোফাইল গুলো খুব ভালো লাগতো মানে ইন্টারেস্টিং লাগতো তাদের ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট করতাম। বলে দিতে চাই আমি বেসিক্যালি ওয়ার্ক হিস্ট্রি আর পোস্টের বিষয়গুলোতে নজর দিতাম। তারপর অনেকে রিকুয়েস্ট এক্সেপ্ট করত। তখন আমি তাদের কারো সাথে আমার কথাগুলো বলতাম। চিনি না, জানি না তাও শুধু কথাগুলো শেয়ার করার জন্য খুব ছটফট করতাম তাই করা। আর তা একদিনই, সেদিনের পর তাদের সাথে আর কথা হবে না মানে বলিনি। এর ফলে দুইটা জিনিস হত; এক হল আমার কথাগুলো শেয়ার করে কিছুটা হাল্কা হতাম। দুই যেহুত তাদের সাথে আমার কোনো লেনাদেনা নেই তাই আমার একান্ত কিছু কথা বলে ফেললেও পরে কোনো ইস্যু হওয়ার চান্স কম। এখন কথা যদি এমন হয় যে বিষয়টা জীবনে বারবার একটা সার্কেলের মত আসবে বা আসে তাহলে তো তা নিজের চেনা কোনো বন্ধুর সাথেই শেয়ার করতে হবে। এক্ষেত্রে বলি বন্ধু মানে বয়স সমান এটা ভাবার কোনো কারণ নেই। বন্ধুর সাথে মনের আর আত্নার মিল হওয়াটা আবশ্যিক। বাকি সব নগন্য বিষয়।

তার কাজটা ভুল আমি বলছি যার ব্যাখ্যা এখন সে বুঝছে না। আসলে কথা গুলো শুনতে বোরিং লাগে তা আমারও জানা। সত্যি বলছি, আমারও বোরিং লাগে। তাও তার ভালো চাই বলে বলা। একটা মেয়ে আর একটা ছেলের মধ্যে আমরা যে পার্থক্য গুলো আলোচনায় বেশি আনি আসলে সেগুলোর বেশির ভাগই খুব সস্তা বিষয়। এসব পার্থক্যের থেকেও অনেক বড় কিছু পার্থক্য আছে। জানো কিনা জানি না তবে ছেলেরা কাঁদে। হুম, শুনে অবাক হবে যে ছেলেরাই বেশি কাঁদে মেয়েরা এত কাঁদে না। আর সে কান্নার পানিতে হয়তো, ছেলেদের জীবনের দাগ গুলো সাধারণত মিশে যায় কিন্তু একটা মেয়ের জীবনে দাগ গুলো সহজে মিশে না। এইটা ছেলে আর মেয়ের মধ্যে অন্যতম প্রধান পার্থক্য। মেয়েরা ধারণ করে, শুধু গর্ভ নয় তার জীবনের সাথে লেজুর থাকা বেশির ভাগ জিনিস। এই যে মেয়েটা একে ওকে তার সমস্যা গুলো বলছে। তার ধারণাও নেই এই কাজ তার কত বড় ক্ষতি করতে পারে। একটা ভালো ছেলের প্রস্তাব আসলে তার বেস্টফ্রেন্ড যে ছেলেটাকে তার বিষয়ে এই কথাগুলো বলে বিয়ে ভেঙে দিবে, এটা তার এখনো শিখা হয়নি। সে যে যাকে তাকে বলছে যে সে মানসিক ভাবে সুস্থতা না, শুধুমাত্র এই কথাটা যে তার জীবন কোন পথে নিয়ে যেতে পারে সে জানে না। তার মত সারাদিন বিষণ্ণতায় থাকা একটা মেয়েকে ভালো করার চেষ্টা করা যেতে পারে। কিন্তু বছরের পর বছর পার করেও সে সুস্থ না হলে তার সাথে সংসার করা যাবে না। যদি সে সারাদিন বিষণ্ণতায় বা উদ্ধিগ্নতায় থাকে একদিন তার সন্তান হলে সে সন্তান মায়ের কাছ থেকে যথেষ্ট সুবিধা পাবে না৷ যার ফলাফলে সন্তানটার লালনপালনে ত্রুটি সৃষ্টি হবে। একজন সচেতন বা শিক্ষিত ছেলে সহজে এই জিনিস মেনে নিবে না।

এতক্ষণ বিয়ে করতে বা সংসারে কি হবে তা বলছি দেখে ভেবো না যে তার যেন বিয়ে ছাড়া জীবনই হবে না। বিয়া ছাড়াও অনেকে সুখে থাকে। তবে সে যদি তার এইসব কথা একে ওকে বলতে থাকে তবে একটা সময় সে তাদের কাছে মূল্যহীন হয়ে যাবে। আবার অনেকে তার বিষয়ে উল্টাপাল্টা কথা বলবে। এসব মেনে নিয়ে জীবন খুব দুষ্কর। বুঝলে তো?

বলতে পারো এসব নেগেটিভ চিন্তা। হ্যাঁ, আমিও স্বীকার করি এগুলো নেগেটিভ। তবে এই বিশ্বটাই যে নেগেটিভ তা তো জানো। কোনো বন্ধুকে নামাজে ডাকবা দেখবা যেতে চাইবে না৷ কিন্তু তাকেই বলবা যে, বেটা চল পি.এন. স্কুলের গেটে ওকে দেখতে যাবো, ঐ যে ঐ মেয়েটা। ও তোমার সাথে এই কাজে আবার ঠিকই যাবে। আর সেখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সে যে ঐ মেয়েটা ছাড়াও আরো কত মেয়ে আর যা দেখবে ততদূর হয়তো আমরা গুণতেই পারবো না। ইভেন তুমিও ঐ একটা মেয়েকে দেখতে যেয়ে অন্তত চার-পাঁচটা মেয়ে যে দেখে ফেলবে এটাই স্বাভাবিক! তো দেখো মানুষকে ভালো কাজে ডাকলে সহজে যাবে না কিন্তু নেগেটিভ কাজে দিব্বি যাবে। এভাবেই নেগেটিভ বিষয় গুলো পজেটিভকে আকর্ষণ করে হারমানায়। বিজ্ঞান বলে এই পৃথিবীর মাটি সকল শক্তি শুষে নেয়। কারেন্টের নেগেটিভ লাইনটা মাটির সাথে সংযোগ পায়। এর মানে, পৃথিবীটাই নেগেটিভ। এই পৃথিবীর মাটি নেগেটিভ। তাই নেগেটিভটা আমরা ভাবতে বাধ্য। এর সামনে সকল পজেটিভ আকর্ষিত হয়ে চাপা পড়ে যায়।

আমাকে একজন প্রশ্ন করেছে তোমাকে লিখার সময় মানিক মিয়া এভিনিউ এর ঠিকানাই বেশি কেন দেই। মানিক মিয়া এভিনিউ-এ বসে বসেই কি তাহলে তোমাকে লিখি? আর তাহলেও বা কেন। তাকে বললাম আমার খুব পছন্দের জায়গা এটা। অনেক সুন্দর। দারুণ গতিতে গাড়ি ছুটে চলে, মানুষ ছুটে যায়। বিশাল এই রাস্তা নিয়ে যায় বিশাল জীবনের আকাঙ্ক্ষিত স্থানে। বসে বসে আমি তা দেখি, ভালো লাগে। আমিও মাঝে মাঝে ছুটে যায় এ রাস্তা দিয়ে। আর একজন বলেছে তার তোমার প্রতিত্তোর পড়ার ইচ্ছা। আমি বললাম, সে তোমার চিঠি পড়তে পারবে না। আবারো প্রশ্ন করলো কেন? আমি বললাম আমি একদিন তাকে কারণটা জানাবো৷ খুব মজার না বলো? অনেকের মনে আগ্রহ আছে তোমার সাথে পরিচিত হওয়ার।


ইতি
মাহিন - আল বিরুণী





মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ