কল্পনিতা ১২ জানুয়ারি, ২০২০

১২ জানুয়ারি, ২০২০
মানিক মিয়া এভিনিউ

কল্পনিতা,
মাত্র তিনদিন পর তোমাকে লিখছি! মানে পর পর তোমাকে লিখছি। তবে কি আমাদের প্রেম আবারও জমে উঠছে? এক মিনিট, এক মিনিট কি প্রেম? যা হোক। গত চিঠিতে তুমি কেমন আছ তা জিজ্ঞেস করা হয়নি। আমি ভুলে গেছিলাম এমনটা নয়, তারপরেও কেন লিখিনি জানি না৷ তবে আমি লিখি বা না লিখি তুমি জানাতে ভুলবা না একদম। তোমার ভালো থাকাটা আমার জীবনের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। আজ অবশ্য জিজ্ঞেস করব।

সে আমাকে অণুবীক্ষণযন্ত্রে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে চাই। তার একটা গন্ধ আছে, আমি তা বিশ্লেষণ করতে চাই৷ আমি যখনই সে গন্ধটা বিশ্লেষণ করতে চেষ্টা করি সাথে সাথে সে যেন পারফিউম আর বডি স্প্রে মেরে সম্পর্ণ গন্ধটা ঢেকে ফেলে।
তার আমাকে খুঁটিয়ে দেখার ইচ্ছাটা মাঝে মাঝে এত বেশি হয়ে যায় যা হয়ত তারও সহ্য হয়না। তবে সে যে আমার মাঝে কি খুঁজতে চায় তা সে বলে না। এসব জোড়াজুড়িতে সেদিন তাকে বললাম, আমার কি তোমাকে মমতাদি গল্পের সেই বিখ্যাত লাইনটা বলা উচিৎ নয়? যা কেউ দেয়নি তুমি কেন দিবে?
সে উত্তর করে দিলো, আমি আলাদা তাই।

খুব চমৎকার উত্তর করেছে সে। তবে সে কি জানে, এ শহরের আড্ডা মহলে আমাকে অনেক চরিত্রহীন বলে। আমি দশ কদম দূরে আসলেই শব্দটা যে "বেশ্যা" তে পরিবর্তত হয়ে যায় তা আমার জানা। তারা কি জানে, এক রাতে যখন আমাকে হঠাৎ জড়িয়ে কেউ চুমু খেয়ে ছিল, আমার পুরো শরীর কাঁপতে লেগেছিল। সে রাতে ভয়ে আমার জ্বর হয়ে গেছিলো। এ চুমু খাওয়ার সুযোগটুকু পাওয়ার জন্য সে বছরের পর বছর অপেক্ষা করেছিল। তারও দাবি ছিল সে সবার থেকে নাকি অনেক আলাদা।

নারীরা সর্বদা ঘ্যানঘ্যান করে পুরুষের লালসা নিয়ে। আচ্ছা তাদের কি মনে হয় পুরুষের আত্নসম্মান বা লজ্জাবোধ নেই? তুমি নগ্ন হলে লজ্জা পাবে, আমি পাবো না? কেন পোশাকের নিচে একটা দেহ কি পুরুষের নেই? কাপড় খুলতে তাদের লজ্জা করে না? কোনো নারী বুঝি লালসা করে না? জানো কি এ দেশেও আজ কল বয় পাওয়া যায়। কল গার্লের চেয়ে বেশি দাম তাদের। বিলাসী নারীরা তাদের ডেকে নেয়। হয়তো তোমাদের নারীবাদীরা খেয়াল করেন না কুমারীর আগে কুমার বলে একটা শব্দ আছে। ভার্জিন ছেলে-মেয়ে উভয় হয়।

কার লজ্জা আছে কার নেই তা আমি আলোচনা করতে চাই না আজ। আমার লজ্জা ছিল আমি এইটা বলতে চাই। তো যে কথা বলছিলাম। আমার যা যা লাগবে তা দিবে এই শপথ বাক্য পাঠ করে এসে সে দেহটা দাবী করেছিল। খুব খারাপ লেগেছিলো, দিয়েছিলাম। ভেবে ছিলাম যদি সে আমার প্রয়োজন টুকু নিবারণ করে তহলে দেহের কি দাম। জীবনের জন্যই তো দেহ। আমার মন সে কবে ক্ষত ক্ষত হয়ে নেওয়ার অযোগ্য, ডাস্টবিনে ফেলা হয়েছে। বাকি ছিল যা তা তাকে দিলাম। আমার প্রয়োজন মেটানোর দামে দেহটা বেচলাম।

লোকে বলে, "ভাঙা কলসি বাজে বেশি"। আমার অবস্থা অমনই হয়ত। দেহ সে নিলো তবে আমাকে আমার প্রাপ্যের কিছু দিলো না। বেশির ভাগ মানুষ ভাবে পুরুষের চাহিদা মানেই তো নারী দেহ। তবে সত্যি হল কিছু কিছু পুরুষের প্রয়োজন আলাদা কিছু। কচি ডাবের পানি সবার ভালো লাগে না। জীবন বিষাক্ত হলে নিমের, তিতা শরবত বেশি প্রয়োজন হয়। শরবত বানাতে দক্ষ হাত লাগে, কচি হাত পরলে অকাজ হওয়ার ঝুঁকি বেশি।

তো এবার বলো, তোমার কি মনে হয়? আমাকে অণুবীক্ষণযত্রে রেখে সে কি দেখতে চাই? আর সবার আগে বলো, তুমি কেমন আছ?

এত কিছুর পর যখন আমি নিজের প্রতি বিশ্বাস রাখতে হিমসিম খাই। বাঁচার জন্য বাঁচতে চাই তখন কেউ কিভাবে ভাবে যে আমি তাকে এত সহজে বিশ্বাস করতে পারবো? আমার জন্য যে এই বিশ্বাস শব্দটা ধীরে ধীরে ভয়াবহ হয়ে যাচ্ছে। বাবা বলেন, "বিশ্বাস করতেই হবে। বাঁচার জন্য বিশ্বাস করতে হয়। সব সময় যে ইচ্ছা থাকে বা মন চায় তা নয়। বাঁচার জন্য আমাদের বিশ্বাস করতে হয়।" সে বিশ্বাসটুকু মনের সাথে যুদ্ধ করে করি। বিশ্বাস আবারো কোনো প্রতারণার শিকার না করে। মন বড় অবুঝ। জীবন খুব অশান্ত। মধ্যরাতে যখন বালিশে মাথা রাখি, নিজেকে একা দেখি তখন কবিতার দুইটা চরণ আবৃত্তি করতে ইচ্ছা করে।
"যদি এ প্রেমে,
কম হয় বেদনার চিৎকার,
বেশি হয় সুখ শিৎকার।
আমি রাজি আছি।"

ইতি
মাহিন - আল বিরুণী












মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ