বাপ গুনে ব্যাটা হয় আর মা গুনে বেটি

প্রচলিত আছে, "বাপ গুনে ব্যাটা হয় আর মা গুনে বেটি।"

কথাটার মানে ঠিক এমন যে; বাবা যেমন ছেলে তেমন হবে আর মা যেমন মেয়ে তেমন হবে অর্থাৎ আচার-আচরণ এবং চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের মধ্যে মিল থাকবে। মনোবিজ্ঞান বলে যে কথাটা যথার্থ। একটি ছেলে শিশু জন্মের পর নিজের আশেপাশে সব থেকে বেশি পূর্ণবয়স্ক  যে ছেলে মানুষটিকে দেখতে পায়, সে হল তার বাবা। একইভাবে একটি মেয়ে শিশু তার আশেপাশে পূর্ণবয়স্কা মেয়ে হিসেবে তার মাকে দেখতে পাই। শিশুর স্বাভাবিক জীবন ধারায় সে বড় হতে থাকে। একারণে সে তার বড় হওয়ার পথে তার বাবা-মা যেহুত সব থেকে কাছে থাকা বড় মানুষ তাদেরকে অনুকরণ কর। বাবা যে রকম শার্ট পরে ছেলেও সেইরকম শার্ট নিতে চায়৷ মায়ের মত লম্বা চুল মেয়েও করতে চায়। বাবাকে ডাক্তার দেখলে ছেলেও ডাক্তার হওয়ার ইচ্ছা পোষণ করে আবার মাকে ডাক্তার দেখলে মেয়েও ডাক্তার হওয়ার ইচ্ছা পোষণ করে। হ্যাঁ, শুধুমাত্র বাবা-মার বৈশিষ্ট্য গুলোকে শিশু অর্জন করে তা নয়। ছেলে শিশুও মায়ের কিছু বিষয় অনুকরণ করে আবার মেয়ে শিশুও বাবার কিছু বিষয় অনুকরণ করে। আবার বাবা-মা উভয়ের থেকে আলাদা কিছু বিষয় এবং বৈশিষ্ট্যও তারা চর্চা করে, একপর্যায়ে নিজের মধ্যে ধারণা করে। তাদের আশেপাশে থাকা অন্য মানুষদের কিছু বৈশিষ্ট্যও তারা ধারাণ করে তবে তা কোনো মতেই বাবা-মার বৈশিষ্ট্য যে পরিমাণ ধারণ করে তার সমতুল্য নয়। এখন প্রশ্ন উঠতে পারে, যে বাচ্চাটা এতিম বা কেউ নেই যার তার ক্ষেত্রে কি ঘটে। খুব স্বাভাবিক ভাবেই সে তার কাছাকাছি থাকা অন্য পূর্ণবয়স্ক মানুষদের অনুকরণ করে। আর সব থেকে কাছের মানুষটার প্রতিই বেশি অনুকরণীয়তা লক্ষ্য করা যায়। বাবা-মার পরেই একটা শিশুর অচরণ-চরিত্র গঠনে তার সমাজ ভূমিকা পালন করে যেমন তার ভাষাটা সম্পূর্ণ সে যে এলাকাতে বেড়ে উঠছে সেই এলাকার ভাষা হয়। একটা শিশু যদি তার বাবাকে দেখে যে মিথ্যা কথা বলে। তখন স্বাভাবিক ভাবেই শিশুটা সেই বিষয়টা নিজের অজান্তেই নিজের ভিতরে ধারণ করে। আবার যদি কেউ দেখে যে তার বাবা মানুষকে সর্বদা সহযোগিতা করে তাহলে সেও বাবার মত অন্যদের সহযোগিতা করার মানসিকতা রাখে। আপনি যদি নিজে মিথ্যা বলে আপনার সন্তানকে সত্যি বলতে বলেন, বিশ্বাস করেন সে বলবে না। আপনার সামনে হয়ত ভয়ে কিছুটা সামাল দিবে কিন্তু অন্যস্থানে ঠিকই মিথ্যা কথা বলবে। বলে রাখা ভালো যে, স্বাভাবিক ক্ষেত্রে মোটামুটি পনের বছর বয়স হতেহতে একটা শিশুর নিজেস্ব একটা ব্যক্তিত্ব এবং চিন্তাধারা সৃষ্টি হয়ে যায়। অর্থাৎ একটা শিশুর বয়স পনের হওয়ার পরে আপনি তাকে যা বলবেন সে যে তাই মানবে তা নয়। সে নিজে বিচার-বিবেচনা মনের অজান্তে করে ফেলবে। আপনি তার বাবা-মা সেটা ঠিক কিন্তু সে নিজে একজন মানুষ, তার নিজের চিন্তা-চেতনা আছে সেইটাও তো ঠিক।

সুতরাং আপনি নিজে একজন সৎ আদর্শ মানুষ না হলে আপনার সন্তান সৎ মানুষ হবে এইটা ভাবা নিতান্তই অবাস্তব। তাই বাংলা প্রচলিত প্রবাদ, "বাপ গুনে ব্যাটা হয় আর মা গুনে বেটি" কথা বৈজ্ঞানিক ভাবে প্রমাণিত।




©মাহিন - আল বিরুণী







মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ