ধর্ষণের কারণ এবং দোষারোপ





যন্ত্রিক এই জীবনে আমাদের সামাজিকীকরণে
এতটাই অসামাজিকতা আছে। যে ম্যাডামকে বাধ্য হয়ে
বলতে হল, একটা প্রেমপত্র যা পড়ে প্রেমিকা
অনুপ্রাণিত হবে। তা লিখা ক্ষমতাও আজকালকার বেশি
ভাগ ছেলেদের নাই।
কথাটা ম্যাডাম এইখানেই শেষ করলেও প্রকৃত
পক্ষে শুধু প্রেমপত্র লিখা না; বাস্তব প্রেম আর
ভালোবাসা অনুভব করার কিংবা অনুভূত হওয়ার আবেগটাও
আজকালের বেশির ভাগ ছেলেমেয়েদের নাই।
আমাদের সামাজিকিকরণে এতটাই যান্ত্রিকতা এবং
ব্যার্থতা মিশে আছে যা বলে প্রকাশ করার মত না।
আর এই সকল কারণেই আমাদের সমাজে আজকাল
শত অসামাজিক কর্মকাণ্ড ঘটছে।
পাঠক আপনিও যেহুত এই সমাজেরই একজন, নিশ্চয়
আপনিও জানে যে প্রেমে প্রতারণা, বাবা-মা এর
সাথে খারাপ আচরণ, মাদকাসক্তি, ধর্ষণ এইরকম অপরাধ
আজকাল প্রতিদিনের খবর। আর এই সবকে
অনেকেই আবার 'খারাপ মানসিকতা' বলে থাকেন।
কিন্তু বাস্তব অর্থে কিন্তু ব্যাপারটা তা নয়। আচ্ছা
'মানসিকতা' এই জিনিসটার উৎপত্তি হয় কোথা থেকে?
মানসিকতার উৎপত্তি হয় একজন মানুষের সামাজিকিকরণ
থেকে। শুনে আবকা লাগল তাই তো? তবে একটু
বিস্তারিত ভাবে বলি। আচ্ছা, মানসিকতা বলতে আপনি কি
বোঝেন বলেন তো? মানসিকতা হল একজন
মানুষের চিন্তা, চেতনা, কল্পনা, দৃষ্টি ভঙ্গি ইত্যাদি
সহজাতিয় কিছু বিষয়ের একত্রিত রূপ। তাই নয় কি? আর
যদি তাই হয় তবে, মানুষের মধ্যে এই মানসিকতা আসে
কোথা থেকে? অবশ্যই তার সামাজিকীকরণ থেকে।
তার জন্ম থেকে তাকে আপনি যেই পরিবেশে
বড় করছেন তা থেকেই তার সামাজিকীকরণ ঘটে।
আপনি তাকে যেই সমাজে রাখছেন, সেখানের
পরিবেশের সাথে মিল রেখেই তার সামাজিকীকরণ
হচ্ছে। আর তার এই সামাজিকীকরণ তার চিন্তা-চেতনা
ইত্যাদি সৃষ্টি করছে। ধরে নেন, আমি শুরু যেখান
থেকে করে ছিলাম। প্রেমের বিষয়টি, আজকাল
নিশ্চয় প্রেমে প্রতারণা এই কথাটা খুব শুনতে পান।
আচ্ছা প্রেমের বা ভালোবাসার অনুভুতিটা জন্মায় কি
করে জানেন? এই অনুভুতিটা একদিনে নয় দীর্ঘ
দিনের সময়কালে সৃষ্টি হয়। একটা শিশু জন্মের পর
থেকে তার বাবা-মা এর সাথে থাকে। আর তার বাবা-মা এবং প্রতিবেশ, আত্নীয় সবার সাথে মিলেমিশে
থেকে তার মধ্যে একটা অদৃশ্য মায়াটানের অনুভুতি
হয়। আর এই মায়াটানের নামই ভালোবাসা। অবশ্য আমি
খুব সংক্ষেপে কথা বলার চেষ্টা করছি। বর্তমানে
এই মায়াটান সৃষ্টি তেমন একটা হয় না। কারণ বাবা-মা
করেন চাকুরী আর তাদের নিজেদেরই যখন
পরিবারে সময় দেওয়ার সময় থাকে না; তখন
আত্নীয়দের আর কোথা থেকে সময় দিবেন।
আর এর ফলে তাদের শিশুটিও বড় হয় অনেকটা
বাতাসে। তার মধ্যে ভালোবাসা নামক বিষয়টি বিরাজিত
হওয়ার আবেগ জন্ম নেয় না। আর এর ফলেও
বর্তামানে এই অসামাজিক অবস্থাটা সৃষ্টি হচ্ছে। এইবার আসি আজ আমি যে বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে চাই
সেটাতে। তা হচ্ছে ধর্ষণের কারণ। এই নিয়ে
তর্কের শেষ নেই। আর আমার এই লিখাটা যেহুত
সংক্ষিপ্ত আকারে লেখা। তাই অনেকের এইটা পড়ার
পরেও কিছুটা আত্নসমর্থনে যুক্তি থেকে যাবে।
তাদেরকে বলতে চাই, যদি কিছু মনে না করেন তা
হলে আমার সাথে একটা ঘন্টা সময় নষ্ট করে
মোবাইলে বা ফেসবুক কলের মাধ্যমে
আলোচনা করতে পারেন। আমি ২০১২ সালের
দিল্লির ঘটনাটার পর থেকে এই বিষয়ে একটা
ছোটখাটো ব্যক্তিগত গবেষণা করেছি। যার
কোন লিখিত অনুলিপি আমি করিনি। আমার
ব্যক্তিগত কারণে। তবে আজ আমার সেই
গবেষণার এক ঝলক আপনাদের সামনে উপস্থাপন
করলাম। আগেই বলে রাখি এই গবেষণা চলাকালীন
আমি কিছু বখাটের সাথেও চলাফেরা করেছি, কিছু
বালিকা বিদ্যালয়ের সামনে নজর রেখেছি,
ততকালীন সময়ের প্রায় একটি বছরের
খবরেরকাগজে আসা ধর্ষণ এবং ইভটিজিং এর খবর
পড়েছি।
আমাদের সমাজে ধর্ষণ বা ইভটিজিং এর কথা শুনলেই
ছেলেদের বেশির ভাগই বলে পোশাকের
দোষ। আর মেয়েদের বেশির ভাগই বলে
মানসিকতার দোষ। অবশ্য কিছু ভিন্ন মতও পাওয়া যায়।
তবে আমার গবেষণার ফলাফল হল সামাজিকীকরণ
এর দোষ। সংক্ষিপ্ত আলোচনায় কতটা স্পষ্ট ভাবে
উপস্থাপন করতে পারব ঠিক জানি না। তবে বেশির ভাগ
ক্ষেত্র আর যুক্তি অংশিক ভাবে উপস্থাপন করলাম।
শুরুতেই বলে রাখি আমেরিকা। যেখানে প্রায় ৯৯%
মানুষই ধর্ষণের শিকার হয়। এর মধ্যে ৯০% মেয়ে
এবং ০৯% ছেলে। তথ্য সূত্র: www.wonderslist
.com/10-countries-highest-rape-crime/
আর ইসলামিক বিশ্বের কেন্দ্র সৌদিআরবে প্রতি ১
লক্ষতে মাত্র ২.১৯ জন মেয়ে ধর্ষিত হন। তথ্য
সূত্র: https://en.m.wikipedia.org/wiki/
Rape_in_Saudi_Arabia
বিশ্বের বুকে এই দুইটি দেশের পোশাক আর
চলে ফেরার নিয়ম এবং সংকৃতি সম্পূর্ণ দুই মুখি। আর
তাদের এই সংকৃতি সম্পর্কে আমি নতুন করে বলার
প্রয়োজন বোধ করছিনা।
এখন নিশ্চয় যারা পোশককে দোষ দেন তারা
লাফিয়ে উঠবেন। কিন্তু দাদা কথা এখানেই শেষ না।
বিশ্বে ধর্ষণের তালিকাতে ১০ম স্থানে আছে
শ্রীলংকা। তথ্য সূত্র: www.wonderslist.com/10-
countries-highest-rape-crime/ এই দেশটি কিন্তু খুব
একটা অশ্লীল পোশকের দেশ না। কিন্তু তার
পরেও এই দেশটি ১০ম স্থানে আছে। এর কারণ
হল এই দেশে বসবারকারী মানুষদের মনসিকতা
মানেই সামাজিকীকরণ এর বিষয়টি। আসলে আমাদের
বিশ্বে প্রথম পর্ণ ছবি ১৮৯৭ সালে তৈরী হয়েছিল।
তথ্য সূত্র: unrealfacts.com/first-porn-movie-ever-
made-1896/
আর এই পর্ন ছবির পরে আরও পর্ণ ছবি বাজারে
আসলেও বর্তামানে আরও যে একটা বিষয় দেখা
যায় তা হল বিভিন্ন সিনেমায় নারীদেরকে একটা যৌন
লালসার বস্তু হিসেবে দেখানো। আর একটা বাচ্চা যখন
তা দেখছে। আর এই রকম শতশত বিষয় দেখতে
দেখতে বড় হচ্ছে তখন তার সামাজিকীকরণে
অনেক ক্ষেত্রেই এর বিরুপ প্রভাব পরছে।
আর সাথে আমাদের সমাজের বর্তমানের
মেয়েরাও নাটক আর সিনেমা দেখে সেই সকল
অশ্লীল পোশাক পরিধান করছে। এবং অনেক
ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে যে তারা নিজেদের ঐ
সিনেমার মত একটা যৌনবস্তু হিসেবে উপস্থাপন
করতেই পচ্ছন্দ করছে। তার সাথে যৌবনে
বিপরীত লিঙ্গের কাছ থেকে কিছুটা সাড়া পাওয়া এবং
নিজেকে সকলের কাছে আকর্ষণীয় করে
তুলার বিষয়টিও কাজ করছে। আর একটি মেয়ের এই
যে সামাজিকীকরণের ভিতরে ঢুকে যাওয়া নিজেক
আকর্ষণীয় করে তুলার আর সিনেমার নায়কার মত
কিছু অশ্লীল ভঙ্গি করার মানসিকতা। এবং একটা
ছেলের সামাজিকীকরণের ভেতরে ঢুকে যাওয়া
সে যে নাটক সিনেমায় দেখা লালসা। এই সব এর
ফলেই ধর্ষণ হচ্ছে। এবং দিনে দিনে এর হার
বাড়ছে।
আর একটা বিষয় যেটা থেকে যায় তা হল, অনেক
শালীন পোশাক পড়া মেয়েও তো ধর্ষিত
হচ্ছে। এর উত্তর দেওয়ার আগে একটা প্রশ্ন
করতে চাই, আচ্ছা কোনদিন ক্লাসে এরকম
দেখেছেন যে শিক্ষক ক্লাসে আসলেন। এবং
কিছু দুষ্টু ছেলেমেয়ে শিক্ষককে উত্তেজিত
করল। আর তার পরক্ষনেই আপনি আপনার পাশের
জনকে একটা ছোট কথা বলার সাথে সাথেই
আপনাকে কান ধরতে হল? ঠিক এই সময়ে যা ঘটে তা
হল। শিক্ষক ক্লাসের সেই দুষ্টুদের আচরণে
রাগান্বিত থাকেন। আর তার পরে যখন আপনার একটা
দোষ ধরতে পারেন। তখন আপনাকে শাস্তি দেন।
ঠিক সেই জিনিসটাই ঘটে, যখন একজন যুবক
অশ্লীল জিনিস দেখতে দেখতে অতিরিক্ত
উত্তেজিত হয়ে যান। তখনই তার মধ্যের পশুত্ব
জেগে উঠে। আর এইটা হল তার রাস্তায়, টি.ভিতে বা অন্য যে কোন
মাধ্যমে দেখা অশ্লীল জিনিসের বিরুপ প্রভাব। আর তার করা পাশুত্ব শুধুমাত্র তার
সামাজিকীকরণের সময়ে দেখা কিছু বিশৃঙ্খলার জন্য সৃষ্ট যার
জন্য ছেলেমেয়ে উভয়ে দ্বায়ী।
সুতরাং ছেলেমেয়ে উভয়ে শালীলতা মেনে
চলুন। এবং আপনার শিশুকে সঠিক সামাজিকীকরণের
শিক্ষা দিন। দেশ ও বিশ্ব উপকৃত হবে।
সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।






সংক্ষিপ্ত রিসার্চটি করেছেন এবং লিখেছেন,
 মাহিন - আল বিরুণী

মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ